+8801303535373
No products in the cart.
মাওলানা আলী আহমদ
যখন মিশকাত জামাতে পড়তাম শরহে আকাইদ কারো কাছে ছিল মাথাব্যথা আবার কারো কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই কিতাব নেসাবে থাকায় বিষয়সম্পর্কিত অন্যকিছু কিতাব পড়া হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
শরহে আকাইদ পড়াতেন আদর্শ কর্মঠ ও নীতির প্রশ্নে আপোষহীন ব্যক্তিত্ব, আমাদের উসতাদ-ই মুহতারাম, শাইখ আনওয়ার হুসাইন শরীয়তপুরী হুজুর হাফিযাহুল্লাহ।
হুজুর যখন কিতাব পড়াতেন তখন মনে হতো, আরে আমাদের দার্শনিক হতে তো আর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। হুজুর পড়াতেন এবং খুঁটিনাটি যত গোপন প্রশ্ন থাকতে পারে সেগুলোরো সমাধানও করে দিতেন। আমাদের জন্য ছিল এটা অনেক সুখের। কারণ, বেশিভাগ দিন তাকরার (গ্রুপ স্টাডি) ছাড়া আর অতিরিক্ত পড়া লাগত না।
ক্লাশে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল অবাধ। আমরা আদবের সাথে প্রশ্ন করতাম দেদারসে। হুজুর সন্তুষ্টচিত্তে উত্তর দিতেন।
আমার খুব মনে পড়ে, যেদিন আল্লাহ তাআলার গুণাবলি নিয়ে তাকরীর (লেকচার) চলছিল হুজুর বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলার সিফাত হচ্ছে এমন যে, এগুলো তাঁর যাতও (সত্তা) না আবার তাঁর গাইরও (তিনিভিন্ন অন্য) না।
সাথেসাথে জানতে চাইলাম, হুজুর, তাহলে এগুলো কী? যাতও না আবার গাইরও না; নিশ্চয়ই মাঝামাঝি কিছু। সেই মাঝামাঝি কিছুটা কী?
এই প্রশ্নকে হুজুর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে সবিস্তারে উত্তর দিয়েছিলেন এবং বিষয়টা আমি ভালোমতেই আয়ত্ত করেছিলাম হয়তো।
সেদিন হঠাৎ এই প্রশ্নটা মাথায় উঁকি দিল কিন্তু উত্তরটাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হৃদয়-ডায়রিতে পাইনি। নিজের ওপর লজ্জিত হওয়া ছাড়া আমার জন্য দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা থাকল না। মেধা যে মানুষের সাথে প্রতারণা করে সেটা আবারও নতুনভাবে বুঝলাম।
অনেকের কাছে -বাস্তবেই অনেকের দুয়ারে- হাজির হলাম প্রশ্নটি নিয়ে। একেকজন তাঁদের অবস্থানে তুলনাহীন। কিন্তু এই প্রশ্নের প্রশান্তিকর উত্তর পাইনি। বুঝতে পারলাম, সবকিছু সবাই সবসময় বলতে পারে না। এবং এটা তাঁদের কোনোরকম দোষও নয়।
অবশেষে হাজির হলাম শাইখ মুফতী আবদুল কাদির মাসূম হাফিযাহুল্লাহ-এর কাছে। তিনি প্রশ্নটি শোনে ক্ষণকাল নীরব থেকে বললেন,
“দেখো, তোমার শরীরে যে চামড়া আছে এটা শরীরেরই অংশ এবং এটা ছাড়া তোমার অস্তিত্ব হুমকির মুখে। কিন্তু চামড়ার যে রং সেটাও তোমার চামড়ার অবিচ্ছেদ্য কিছু, যা না-হলেই নয়। অর্থাৎ চামড়ার একটা রং থাকতেই হবে। তবে এই রং-টা সাদা হওয়া কিংবা কালো হওয়া তোমার অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য নয়। কালো হলেও হবে আবার সাদা হলেও চলবে। সর্বোপরি এটা থাকা না-থাকা তোমার অস্তিত্বের ওপর কোনো আঘাত করে না।
আল্লাহ তাআলার সিফাত তথা গুণাবলিও হচ্ছে ঠিক এই রকম। এগুলো শরীরের চামড়ার রঙের মতো। চামড়ার সাথে থাকলেও যেমন ব্যক্তির অস্তিত্ব থাকে তেমনই না-থাকলেও ব্যক্তির অস্তিত্ব বিরাজমান। ঠিক একইভাবে সিফাত থাকলেও আল্লাহ আছেন আবার সিফাত না-থাকলেও আল্লাহ আছেন। আশা করি, তোমাকে বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি।”
জ্বি, আমি ভালোভাবে বুঝেছি। জাযাকুমুল্লাহু আহসানাল জাযা।
০৩/০৬/২০২০